দিনাজপুর মুক্তিযুদ্ধ আর্কাইভ, ১৪-ই ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত দিবস উদযাপন পরিষদ এবং পাটোয়ারী বিজনেস হাউজ প্রাঃ লিঃ এর পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালে হামজাপুর অপারেশন ক্যাম্প বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের দিনাজপুর আগমন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গত ২৮ নভেম্বর ২০২১ দিনাজপুর নাট্য সমিতি মিলনায়তনে আগত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত ও ১৯৭১ সালে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৭ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার বীর বিক্রম লে. কর্নেল কাজী নূরুজ্জামান, বীরউত্তম লেফটেন্যান্ট কর্নেল নজরুল হক, সাব সেক্টর কমান্ডার বীর বিক্রম ক্যাপ্টেন ইদ্রিস আলী খান এবং সাব সেক্টর ডেপুটি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মেজর আমিনুল ইসলামের যুদ্ধ কালীন ঘটনার উপর নির্মিত একটি বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ১৪ ই ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত দিবস উদযাপন পরিষদের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টরের (হামজাপুর ক্যাম্প) ডেপুটি কমান্ডার মেজর আমিনুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফরহাদ আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন, দিনাজপুর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ফারুকুজ্জামান মাইকেল, দিনাজপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক জেলা কমান্ডার সাইদুর রহমান, দিনাজপুর বিরল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কাশেম অরু। সংবর্ধনা অনুষ্ঠেনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর বিক্রম ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খানের সহধর্মিনী সুলতানা খান এবং বীর উত্তম কর্নেল নজরুল হকের সন্তান ইমরানুল হক।
এর আগে দিনাজপুর কুঠিবাড়িতে ১৯৭১ সালের তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সব ঘটনা ঘটেছিল তা নিয়ে একটি প্রামান্য চিত্র তৈরির জন্য মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়েছিল। প্রায় ৫০ বছর পর দিনাজপুরের কুঠিবাড়িতে দিনাজপুরের মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মাণাধীন তথ্যচিত্র তৈরীর জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এক মিলন মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। গত ২৭ নভেম্বর সে দিনের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রাক্তন ই.পি.আর বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা কুঠিবাড়িতে দাঁড়িয়ে তারা সেই দুঃসাহসী এবং রোমাঞ্চকর যুদ্ধের বর্ণনা দিলেন। তাদের স্মৃতির চারণে বারবার উঠে এসেছে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে সেদিনের দুঃসাহসিক ঘটনাবলী। দিনাজপুরে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যে বুলেটটি প্রথম ছুঁড়ে ছিল এবং দিনাজপুরে যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল সেই কুঠিবাড়িতে যা ছিল তৎকালীন ই.পি.আর-এর হেডকোয়ার্টার (বর্তমান বিজিবি দিনাজপুর সদর দপ্তর)। সেই সম্মুখ যুদ্ধে বহু বাঙালি সৈন্য হতাহত হয়েছিল এবং একপর্যায়ে সাহসী বাঙালি ই.পি.আরদের সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে ই.পি.আর পাকিস্তানী সেনারা কুঠিবাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। ৫০ বছরের অনেক কিছু বদলে গেলেও আজও স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই দিনের স্মৃতি তাদের চোখে যেন জ্বলজ্বল করছিল। অনেক মুক্তিযোদ্ধারা যারা এই কুঠিবাড়িতে দেশকে মুক্ত করতে সেদিন নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন হানাদার বাহিনীর উপর তারা তাদের সাথে নিয়ে এসেছিলেন তাদের পরবর্তী প্রজন্ম -ছেলে মেয়েদের ও নাতি নাতনীদের। তারা সেদিনের তাদের অবস্থানের এবং তাদের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে দেখান তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তৎকালীন ইপিআর সদস্যরা স্মৃতিচারণ করেন তারা হলেন ওবায়দুল হক, আব্দুল হাকিম, আব্দুল মমিন, ফজলুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ। আরও সাক্ষাৎকার দেন আবু হায়াত মোহাম্মদ কুদরতে খোদা, সাইদুর রহমান, ইমরানুল হক-লেফটেন্যান্ট কর্নেল নজরুল ইসলামের সন্তান ও আজাদ আবুল কালাম।
প্রত্যেকেই তাদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে আপ্লুতত হয় পড়েন। ৫০ বছর পর এমন আয়োজন প্রথমবার হলেও তারা বারবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন উক্ত অনুষ্ঠানের আয়োাজক বৃন্দদের।
তারপর তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭নং সেক্টর হামজাপুর অপারেশন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। সেখানে বর্তমান সুন্দরা বিজিবি ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের এক মিলন মেলায় পরিনত হয়। সেখানেও মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মরা অংশগ্রহন করেন। এক স্মৃতিচারণ সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য রাখেন তারা হলেন, যুদ্ধকালীন কমান্ডার অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আক্তার, বীর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, জুনিয়ার কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আবু হায়াত মোঃ কুদরতে খোদা, বীর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জোবেদ আলী, সাবেক বিরল থানা কমান্ডার আবুল কাশেম অরু, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমজাত আলী, বীর বিক্রম ক্যাপ্টেন ইদ্রিস আলী খান এর মেয়ে, ফুলবাড়ী ব্যাটালিয়ন (২৯ বিজিবি) সুন্দরা বিওপি এর নায়েক সুবেদার মোঃ শফি উদ্দিন, দিনাজপুর জেলা ইউনিট কমান্ড ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মোঃ আকবর আলী, চিরিরবন্দর থানার সাবেক কমান্ডার মোঃ মমিনুল ইসলাম ও কাহারোল থানার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল সালামসহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফরহাদ আহমেদ।