চ্যাটজিপিটির আগমনে অনেক কিছুই উল্টেপাল্টে যাচ্ছে। সম্ভাবনার সাথে দেখা দিচ্ছে শঙ্কাও। মনে করা হচ্ছে চ্যাটজিপিটি নামক এই উন্মুক্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে চাকরি হারাতে পারে অনেক পেশার মানুষ।
নভেম্বরের ৩০ তারিখ পরীক্ষামূলকভাবে উন্মুক্ত করা হয় চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি। এরপর থেকে নানা রকমের কাজ এটি দক্ষতার সাথেই করে দেখাচ্ছে। মেডিকেল পরীক্ষা নেওয়া কিংবা ইমেল অথবা গান লেখা। সব জায়গাতেই অবাধ বিচরণ চ্যাটজিপিটির।
মাইক্রোসফটের আর্থিক সহায়তায় তৈরি হওয়া চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারী বিবেচনায় খুব কম সময়ে অধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করা অ্যাপের খেতাব জিতে নিয়েছে।
বাজারে আসার দুই মাসের মধ্যেই চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর মাইলফলক ছুঁয়েছে চ্যাটজিপিটি। এই চ্যাটবটের দাপট ঠেকাতে টেক জায়ান্ট গুগলসহ অনেকেই একই ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাজারে এনেছে। কেউ আবার আনার ঘোষণা দিয়েছে।
চ্যাটজিপিটির নতুন ভার্সন ‘জিপিটি-৪’ ছবি ও ২৫ হাজার দীর্ঘ শব্দমালা বিশ্লেষণে সক্ষম। এটি হাতে আঁকা স্কেচ থেকেই ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারে, মুহূর্তেই বানিয়ে দিতে পারে গেমস।
এই কাণ্ড দেখে এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানিয়েছে, ২০২৩ সালের মধ্যে চ্যাটজিপিটির কারণে কাজ হারাতে পারে ২০৮ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ৮০ লাখ মানুষ।
সেখানেই প্রশ্ন সত্যিই কী চ্যাটজিপিটির কারণে চাকরি হারাবে মানুষ।
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন চ্যাটজিপিটি ও এর প্রতিদ্বন্দ্বী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্নরা শ্রম বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। কিছু নিয়মিত কর্মক্ষেত্র এর কারণে সংকুচিত হতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে এটা মানুষের কাজেই সহায়তা করবে। যদিও কোথাও বেকারত্ব বাড়ার শঙ্কাও আছে।
তবে বিশেষজ্ঞা ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই অ্যাপটিকে একা ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ তাতে নানা রকম বিপত্তি দেখা দিতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাঝে মানবিক গুণ নেই। আছে নানা সীমাবদ্ধতাও। তাই এটিকে একা ফেলে রাখলে হিতে ঘটতে পারে বিপরীত।
বিশেষজ্ঞ লরা নুরস্কি বলেছেন, ‘এটা বিস্তৃর্ণভাবে সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে তথ্য সংগ্রহ করতে সাহায্য করবে।… কিছু নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে এটা বেশ কাজেও দেবে।’
আর সে কারণেই কিছু কর্মক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবটের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেই মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞ। ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষক জিওরজিওস পেট্রোপোলস বলেছেন, ‘শিক্ষা ক্ষেত্র এর কারণে আমূলে বদলে যেতে পারে। বিশেষ করে ভাষান্তর ও ফোন অপারেটরসরা সহজেই বাস্তুচ্যুত হতে পারেন।’তবে চ্যাটজিপিটির কারণে কায়িক শ্রম দেওয়া মানুষ যেমন পোশাক শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি কিংবা কাঠমিস্ত্রিরা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলেই উঠে এসেছে গবেষেণায়। তাই যেসব ক্ষেত্রে মানবিক দক্ষতার দরকার পড়ে, সেসব ক্ষেত্র চলতে পারে আগেরই মতোই। কারণ, মানবিক স্পর্শ ছাড়া এখনো অনেক কিছুই অপূর্ণ থেকে যায়।
আমাদের ফেসবুক লিঙ্কঃট্রাস্ট নিউজ ২৪