ভালো দাম, উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং ভাল ফলন পাওয়ায় লাভজনক এই সরিষার চাষ দিনাজপুরে লক্ষ্যা মাত্রা ছাড়িয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষা চাষে ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে লাভবানের আশাবাদ কৃষকদের। এখন সরিষার ক্ষেতে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো ফসলের মাঠ। মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ। বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক। দৃষ্টিনন্দন এমন অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রাম বাংলায় ছুটে আসে অনেকে। সরিষা ক্ষেতও যেন একটি বিনোদন কেন্দ্র। গত কয়েক বছরে এই এলাকার চাষিরা মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। তাই এবার প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার সরিষা চাষ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর দিনাজপুর জানায়, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জন হয়েছে ১৩ হাজার ১৬২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ২৮০টন। এবার বারি-১৪, বারি-১৭. বারি-১৮ জাতের সরিষার চাষাবাদ করা হয়েছে। কৃষকদেরকে উন্নত জাতের বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে।
দিনাজপুরে সরিষা চাষের সাথে সাথে চাষ করা হচ্ছে মৌমাছির। এতে করে সরিষার উৎপাদনও বেশী হচ্ছে এবং কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষ করলে ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফলন বেড়ে যাবে।
হাকিমপুর উপজেলার ইসমাইলপুর, ডাঙ্গাপাড়া, জালালপুর, ছাতনি, বোয়ালদাড়সহ বিভিন্ন এলাকা জুড়ে সরিষার চাষ হয়েছে। এবার শুধু হাকিমপুরে ১১৯৬ টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। হাকিমপুরের চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক অনুপ বসাক বলেন, সরিষা চাষ করলে ঠিক সময়ের মধ্যে ফসল তুলে নিয়ে তাতে ধান চাষ করা যায়। এবার প্রায় ৯ বিঘা জমিতে সরিষা রোপণ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় পোকা মাকড়ের তেমন কোন সমস্যা না হওয়ায় ফলন ভালো হবে।
হাকিমপুরের ইসমাইলপুরের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, সরিষা চাষের সময় সেচ ও সার দিয়ে রোপনের পর আর তেমন খরচ নেই। প্রতি বিঘাতে প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হলেও যে পরিমাণ সরিষা পাওয়া যাবে, তাতে ৮/১০ হাজার টাকা পান কৃষকরা। বাড়তি হিসেবে সরিষার গাছগুলো পরিবারের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গতবছর ১৭০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি করলেও এবারে তেলের দাম বেশি হওয়ায় সরিষার দাম ২ হাজারের বেশি হবে বলে আশা করছি।
কৃষক মনতাজ হোসেন বলেন, সরিষা চাষে তেমন কোনও খরচ নেই। বিঘাতে ৫/৭ মণ করে সরিষা পাই। আবার সরিষা তুলে সেই জমিতে ধানও বেশ ভালো হয়। তেমন কোন সার দিতে হয় না। হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, সরিষা চাষ করে আশানুরূপ দাম ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে দিন দিন এই সরিষার চাষাবাদ বাড়ছে।
আমাদের ফেইসবুক Link: ট্রাস্টনিউজ২৪