অবৈধ উপায়ে কামানো টাকায় বিলাসী জীবন গড়ে তুলেছিলেন চিত্রনায়িকা পরীমনি ও মডেল পিয়াসা। রাতের রানি হিসাবে খ্যাত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার আসরে উড়ত কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। পরীমনির চেয়ে বেশি আভিজাত্যের ছোঁয়া ছিল পিয়াসার চালচলনে।
গুচি, ভারসেক, ফেনডি, সালভাটো ফ্রেগে, বারবেরি ও লুইচ ভুইটনের মতো বিশ্বখ্যাত নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্যসামগ্রী ব্যবহার করেন পিয়াসা। তার হাতে দেখা মিলেছে রোলেক্স ব্র্যান্ডের ২৪ ক্যারেটের সোনার ঘড়ি, যার দর ৪২ লাখ টাকা।
আর হাঁকিয়ে বেড়াতেন বিএমডব্লিউ জেড ফোর মডেলের হুডখোলা কার। যেটির দাম ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বেপরোয়া পিয়াসা সব সময় নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাকেই কাঁপিয়ে বেড়াতেন রাতের রাজধানী। আলো ঝলমলে পার্টিতে নিজের আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতেন তিনি। আর এতেই পিয়াসা নামের জ্বলন্ত আগুনে উড়ন্ত পতঙ্গের মতো ঝাঁপ দিয়ে ঝলসে গেছে অনেক বিত্তশালীর জীবন। তছনছ হয়েছে তাদের সংসার। সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র ও পরীমনি-পিয়াসার ঘনিষ্ঠ লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পিয়াসার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, রিমান্ড আবেদন জানিয়ে পিয়াসাকে আদালতে তোলার সময় যে হিজাবের আড়ালে তিনি মুখ লুকানোর চেষ্টা করেছিলেন, সেই হিজাবটি লন্ডনের বারবেরি ব্র্যান্ডের। এটির দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর পুলিশের হাতে গ্রেফতারের সময় তার মুখে থাকা বিদেশ থেকে আমদানি করা মাস্কটির দর ৪ হাজার ৮০০ টাকা। পিয়াসার শুধু জুতার কালেকশনই আছে ২২ লাখ টাকার।
বারিধারার বাসার তিনটি র্যাকে সাজানো জুতাগুলো নামিদামি ব্র্যান্ডের। প্রতিটি শাড়ি ও পার্টি ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে জুতাগুলো কেনা। আর কালার ম্যাচিং করে পিয়াসার কেনা পার্টি পার্টস ও ব্যাগের কালেকশন ৪০ লাখ টাকার।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, পিয়াসার রাতের আসরের অন্যতম একটি জায়গা ছিল বনানীর অভিজাত রেস্টুরেন্ট ফ্লোর সিক্স। রাতের আসরে নেচে-গেয়ে পিয়াসা যখন ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত হতেন, তখন তার চাহিদামতো খাবার যেত অভিজাত ৫ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন থেকে। আরও ভড়কে যাওয়ার মতো তথ্য হচ্ছে-বারিধারা সোসাইটির ডিপ্লোমেটিক জোনের বাসার খরচ ছিল মাসে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। ৩ লাখ টাকার ওই ভাড়া বাসায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল একজন জাপানি কুক, সিসা ম্যানেজার, বারটেন্ডার, দেহরক্ষী, ড্রাইভার ও একজন বিউটিশিয়ান। বাংলাদেশি মেয়ে পিয়াসার বাসায় কেন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল জাপানি কুক, সেই রহস্য ভেদ করতে পিয়াসার কাছ থেকে তথ্য বের করার চেষ্টা করছে সিআইডি। পিয়াসার চালানো বেশির ভাগ গাড়ির কাগজপত্র ভুয়া।
আর এই কারসাজিতে তার সঙ্গে জড়িত মিশু হাসান। এমনকি গাড়ির কাগজপত্র তৈরি করতে গিয়ে নিজের নামে ভুয়া আয়কর শনাক্ত নম্বর ও সনদও বানিয়েছেন পিয়াসা। এজন্য পিয়াসা-মিশুকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নিজের গাড়ি ছাড়াও মিশুর শোরুম থেকে একেক সময় একেক মডেলের বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে পার্টিতে যেতেন পিয়াসা।
আরও জানা যায়, পরীমনির জীবনযাপন পিয়াসার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। পরীমনি আড্ডা দিতেন ঢাকার নামিদামি ক্লাবগুলোয়। আর নায়িকা পরিচয়ে তিনি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা ও উপঢৌকন। তাদের সঙ্গে ভ্রমণ করতেন দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। ভ্রমণের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থের পাশাপাশি তিনি লাখ লাখ টাকার শপিং করতেন। আর দেশে বনানীর নিজ বাসায় আয়োজন করতেন পাশ্চাত্য ধাঁচের আসর। সেখানে যাতায়াত করতেন প্রভাবশালীরা।
এদিকে পরীমনি ও পিয়াসার এমন বিলাসী জীবনের অর্থের জোগানদাতাদের নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকের সঙ্গে এ দুই তারকার ঘনিষ্ঠ ছবিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে একটি দুষ্টচক্রের বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখে অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। কারণ পরীমনি ও পিয়াসার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কোনো তালিকা করেনি পুলিশ।
তবে দুদকের একজন পরিচালক বলেছেন, পরীমনি, পিয়াসা, হেলেনা জাহাঙ্গীর, নজরুল রাজ ও মিশু হাসানের মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দুদকের এখতিয়ারভুক্ত হলে তা অনুসন্ধান করে দেখা হবে।
আর তদন্ত সংস্থা সিআইডির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে জানিয়েছেন, এসব আসামির বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট কেনার অর্থের উৎস এবং এগুলো অবৈধ অর্থে কিনে বৈধ করা হয়েছে কি না, তা দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান চালালে তারা সবাই ফেঁসে যাবেন। তবে এসব আসামির মানি লন্ডারিংয়ের কোনো অপরাধ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে সিআইডি।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্ট নিউজ ২৪