রাষ্ট্র ধর্ম কথাটাই ভুল। কারণ রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকতে পারে না। ধর্ম মানুষের জন্য-মানুষ কখনও ধর্মের জন্য নয়। মানুষকে সঠিক পথে পরিচালনা করতেই পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে।
‘নৈঃশব্দ ভেঙ্গে জেগে ওঠো বিদ্রোহে’ এই শ্লোগান সামনে রেখে দিনাজপুরে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৫৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনকালে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বেশ আনন্দঘন পরিবেশে শুক্রবার (২৯ অক্টোবর ২০২১) দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমি’র সম্মুখ সড়কে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আয়োজন করে উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদ। আয়োজনে ছিল আবৃত্তি, সঙ্গীত-নৃত্য পরিবেশন ও আলোচনা সভা।
আলোচনা সভায় উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদ এর সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেজাউর রহমান রেজু, উদীচী জেলা সংসদের প্রাক্তন সভাপতি আসাদুল্লাহ সরকার, শিক্ষাবিদ ও গবেষক কাজী আব্দুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জেলা শাখার সভাপতি সুলতান কামাল উদ্দিন বাচ্চু, দিনাজপুর বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. মো. আহাদ আলী, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি রবিউল আউয়াল খোকা, প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি অধ্যক্ষ জলিল আহমেদ, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম, নবরূপী’র সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মেহেরুল্লাহ বাদল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক সত্য ঘোষ।
বক্তারা বলেন, মানুষ ধর্ম পালন করলে বা না করলে সংশ্লিষ্ট ধর্ম মতে ব্যক্তির পাপ বা পূণ্য হবে, দোজখ বা বেহেশতে যাবে অথবা স্বর্গ বা নরকে যেতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের কি কখনও দোজখ বা বেহেশত কিংবা স্বর্গ বা নরকে যাওয়ার বিধান আছে ? না নেই। বাংলাদেশের মত বিশ্বের প্রতিটি দেশে নানা ধর্ম ও মতের মানুষ একত্রে বাস করে থাকে। তাঁরা সকলেই সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক। সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু বলে বিচার করার কোন সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী সকল ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকার ভোগ করার বিধান সেই দেশের সংবিধানে নিশ্চিত করা আছে। রাষ্ট্রযন্ত্র সরকার বা প্রশাসনের দায়িত্ব হল সমাজের সকল নাগরিকদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। বক্তারা বলেন, কোন দেশে যদি শুধু এক ধর্মের মানুষ বসবাস করে তবুও ওই দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ভুমিকা প্রদর্শিত করতে হবে। ধর্মকে নিয়ে যারা রাজনীতি করে তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিশ্বাস করে না। ১৯৬৮ সালে যে লক্ষ্য নিয়ে উদীচী প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তা ক্রমান্বয়ে অবক্ষয়ের পথে যাচ্ছে। তাই আমাদের ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে।
আলোচনা শেষে সংগীত পরিবেশন করেন উদীচী, ভৈরবী, সুইহারী সংগীত নিকেতনের শিল্পী ও নৃত্য পরিবেশন করেন উদীচী জেলা সংসদের ক্ষুদে শিল্পীরা এবং আবৃত্তি করেন কমল, সুস্মিতা, অমিত, পলি, জাহিদ মুস্তাফা ও শুক্লা সাহা।
এছাড়া শেখ ছগির আহমেদ কমল এর প্রানবন্ত সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবন্দ উপস্থিত ছিলেন।