দিনাজপুর বাস টার্মিনাল চত্বরের পুরো এলাকা বড় বড় খানাখন্দে ভরা। সেখানে জমে আছে কাদাপানি। এর ওপর দিয়েই হাঁটাচলা করছেন যাত্রী ও পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা। টার্মিনাল এলাকায় নেই স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে যাত্রীছাউনিটি বেহাল।
১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে দিনাজপুর বাস টার্মিনালের যাত্রীছাউনির উদ্বোধন করা হয়। এটি দিনাজপুর পৌরসভার অধীন। নির্মাণের পর থেকে যাত্রীছাউনি কিংবা টার্মিনাল চত্বরের আর সংস্কার করা হয়নি। যদিও টার্মিনাল ইজারা দিয়ে প্রতিবছর আয় হচ্ছে। সর্বশেষ বাংলা ১৪৩০ সনে টার্মিনালটি ইজারা দেওয়া হয়েছে সাড়ে ৮ লাখ টাকায়।
গতকাল রোববার সকালে টার্মিনাল এলাকা ঘুরে চালক ও তাঁর সহকারী, বুকিং মাস্টার এবং যাত্রীদের কথা হয় এ প্রতিবেদকের। দেখা যায়, তিনটি প্রবেশপথেই বড় বড় গর্ত। বৃষ্টির পানি জমে আছে। গাড়ি এসে থামলেই খাল থেকে ময়লা পানি উপচে পড়ছে। গাড়ি থেকে নেমে কাদাপানির মধ্যেই হাঁটাচলা করছেন যাত্রীরা। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সড়কের ওপর যাত্রীরা ওঠানামা করছেন। অধিকাংশ যাত্রী টার্মিনালমুখী না হয়ে কলেজ মোড় এলাকায় এসে গাড়িতে উঠছেন।
বাস টার্মিনালের বুকিং মাস্টার বাবুল হোসেন বলেন, এখান থেকে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, সেতাবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, সৈয়দপুর, রংপুর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট, বগুড়াসহ বিভিন্ন রুটে দৈনিক তিন শতাধিক গাড়ি চলাচল করে। একেকটি গাড়িতে তিনজন করে স্টাফ হলেও ৯০০ থেকে ১ হাজার স্টাফ আছেন। গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।
বেলা ১১টায় সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা তৃপ্তি পরিবহনে চড়ে টার্মিনালে এসে নেমেছেন ফয়সাল হোসেন (৩৮)। পুরোনো চটের বস্তার ব্যবসা করেন তিনি। ফয়সাল বলেন, ‘সপ্তাহে দুই দিন যাতায়াত করি। রংপুরের কাউন্টারটা পশ্চিম পাশে। ইজিবাইকে বস্তা নিয়ে এলে চালকেরা ভেতরে আসতে চান না। অনেক সময় শহর থেকে টার্মিনাল আসার কথা শুনলে ২০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা চান। একটু বৃষ্টি হলেই জুতা হাতে নিয়ে হেঁটে আসতে হয়।
টার্মিনালের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি টয়লেট। এর পাশেই পরিত্যক্ত একটি পুকুর। এতে ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধের কারণে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ সেই টয়লেট ব্যবহার করেন না। বরং উন্মুক্ত জায়গায় প্রস্রাব করেন অনেকে। ময়লার পাশেই গাড়ি ধোয়ামোছার কাজ চলছে।
পরিত্যক্ত খালে জমে থাকা ময়লা থেকে অল্প দূরেই দুটি ভাতের রেস্তোরাঁ। আর টার্মিনালে প্রবেশপথে রাস্তাসংলগ্ন পাঁচটি রেস্তোরাঁ। যাত্রীসহ গাড়ির চালক, তাঁর সহকারী এবং সংশ্লিষ্টরা মশা, মাছি ও দুর্গন্ধ উপেক্ষা করে খাবার খাচ্ছেন। একটি রেস্তোরাঁয় ভাত খেতে খেতে বাহন পরিবহনের চালক এনামুল হক বলেন, ‘হোটেলের সামনেই ময়লা জমে আছে। মাত্র ২০ হাত দূরে বসে ভাত খাচ্ছি। যাত্রীরা টার্মিনালে আসেন না। কলেজ মোড়ে বসে গাড়ির অপেক্ষা করেন।’
যাত্রীছাউনির ভেতরে গিয়ে দেখা যায় চার কোনায় চারটি কক্ষ। মাঝের ফাঁকা জায়গায় দুটি স্টিলের বেঞ্চ। দুটি কক্ষ শ্রমিকদের অফিস। একটি তালাবদ্ধ, অপরটিতে ভাতের হোটেল। যাত্রীদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। চারপাশে অন্ধকার। মশা, মাছি, মাকড়সা ও তেলাপোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
রাইসুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ২০ মিনিট পরপর গাড়ি পাওয়া যায়। কোথাও যাওয়ার জন্য এলে অন্তত ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় টার্মিনালে। কিন্তু কোনো বসার জায়গা নেই।
বাস টার্মিনাল মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হাকিম বলেন, প্রতিবছর ইজারার আয়ের টাকায় কিছুটা কাজ করা যায়। সেটাও হচ্ছে না। টার্মিনাল সংস্কারসহ অতিরিক্ত জায়গা বরাদ্দ না হওয়ায় গাড়ি রাখার জায়গা নেই। শহরের মধ্যে দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে যানজটে ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ।
জানতে চাইলে পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগামী আগস্টে নতুন টার্মিনালের কাজ শুরু হবে। এ জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
আমাদের ফেইসবুক লিংক : ট্রাস্ট নিউজ ২৪